রাজধানীতে বিদ্যুৎ ও পানির জন্য হাহাকার…

রাজধানীতে বিদ্যুৎ ও পানির জন্য হাহাকার…

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ দিনে দিনে বাড়ছে গরম। আর তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। রাজধানীতে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানির তীব্র সংকট। একদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং এবং অন্যদিকে পানির সংকটে রাজধানীবাসীর জীবনযাপন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও লোডশেডিং কমাতে তেমন কার্যকর পদপে নিতে পারছে না। আর ঢাকা ওয়াসা এবারের গ্রীষ্মে পানি সংকট হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। রাজধানীতে পানির জন্য হাহাকার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ দিকে এখনই লোডশেডিং কমছে না। বরং বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানো লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। চলতি বছরের জুন এবং ডিসেম্বর দু’দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। জুনের মধ্যে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে আরো কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা। এসব কেন্দ্রে জ্বালানির তেলের খরচের জোগান দিতে গিয়ে ব্যয় আরো বাড়বে। তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দামও বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশেই অসহনীয় লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিদিনই সারাদেশে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত এমনকি গভীর রাতেও বিদ্যুৎ ঘন ঘন যাওয়া আসা করেছে। পিডিবির হিসাবে দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের মতো। এর বিপরীতের উৎপাদন প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। ফলে ঘাটতি থাকছে ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াটের মতো। সেই হিসাবে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট।
এদিকে পানি নিয়ে রাজধানীবাসীর নানা ােভ আর অভিযোগের শেষ নেই। গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পানির দাবিতে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটছে। পানির অভাবে অনেক এলাকায় রান্নাবান্না থেকে শুরু করে গোসল, বাথরুম কোনোটাই সময়মতো করা যাচ্ছে না। নিজ এলাকায় পানি না থাকায় অন্য এলাকায় গিয়ে কষ্ট করে পানি আনতে হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক এলাকায় পানি থাকলেও তাতে দুর্গন্ধ ও ময়লা থাকায় তা পান করা যাচ্ছে না। এই পানি খেয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ পেটের পীড়ায় ভুগছেন বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীরা অভিযোগ করেন।  যাত্রাবাড়ীর মতো ঢাকার নয়াপল্টন, রাজারবাগ, শান্তিনগর, চামেলীবাগ, টিকাটুলি, খিলগাঁও, মুগদা, মাদারটেক, মানিকনগর এলাকার পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার গণযোগাযোগ শাখার কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, রাজধানীতে বর্তমানে পানির মোট চাহিদার তুলনায় ২০ কোটি লিটার ঘাটতি রয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ না থাকায় পানি উত্তোলন ব্যাহত হওয়ায় এই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজধানীতে ওয়াসার পানির চাহিদা আছে দৈনিক ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। সেখানে ওয়াসা উত্তোলন করছে ২০৫ থেকে ২১০ কোটি লিটার। গড়ে প্রতিদিন এখানে ২০ কোটি লিটার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে সিস্টেম লস। এ দিকে বুড়িগঙ্গা ও শীতল্যা নদীর পানি অতিমাত্রায় দূষণ ও স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কিছু এলাকায় পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া পাইপ ছিদ্র হওয়ায় কিছু এলাকার পানিতে ময়লা পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওয়াসা দাবি করছে, খুব কম এলাকাতেই দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, ঢাকা ওয়াসার তোলা পানির মধ্যে ৮৭ শতাংশ পানি ভূগর্ভস। বাকি ১৩ শতাংশ পানি রাজধানীর পাশের বুড়িগঙ্গা ও শীতল্যা নদী থেকে নেয়া হয়। এই পানি শোধন করে কিছু কিছু এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, বর্তমান শুষ্ক মওসুমে নদী দু’টির পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দূষণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শোধন করতে কিছুটা বেশি মেডিসিন ব্যবহার করা হচ্ছে। সে কারণে কোথাও পানিতে মেডিসিনের গন্ধ থাকতে পারে। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা ওয়াসার পানির লাইন কেটে সেখানে পাইপ ঢুকিয়ে চুরি করে পানি নিয়ে থাকে। পাইপ কাটার ফলে সেখান দিয়ে ময়লা প্রবেশ করছে। তবে পানি শোধন এবং এ ধরনের ময়লা দূর করতে ওয়াসা ইতোমধ্যে নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করেছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া কিছু এলাকায় নতুন পাম্প বসানোয়ও পানির সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। পাম্পগুলো বসানো শেষ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পানি না থাকায় তাদের কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ বস্তিবাসীর জন্য ওয়াসা গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করছে। বস্তির বাসিন্দারা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এক কলসি পানি নিতে পারছেন। কিন্তু শহরের উঁচু ভবনের পরিবারগুলোর জন্য ওয়াসার পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা মো.শহীদুল্লাহ বলেন, দুই মাস ধরে তাদের পানির সমস্যা হচ্ছে। সারা দিনে এক বেলা পানি পাওয়া যায়। তা-ও আবার মোটর চালানোর ২০ থেকে ২৫ মিনিট পরই রিজার্ভ ট্যাংকের পানি শেষ হয়ে যায়। যে পানি উত্তোলন করা হয় তাতে এক বালতিও ধরে রাখা সম্ভব হয় না। রাজধানীর অনেক পরিবারকে এখন পানির জন্য অতিরিক্তি অর্থব্যয় করতে হচ্ছে। এক  থেকে দেড় শ’ টাকা দিয়ে বিশুদ্ধ পানির জার কিনতে হচ্ছে। ঐ পানি গোসল, রান্নাবান্না ও বাথরুমের কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, একজন মধ্যবিত্ত মানুষের পে এভাবে কত দিন পানি  কেনা সম্ভব?

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার ৬০৫টি পাম্প রয়েছে। ৪২৪টি পাম্পে জেনারেটর সংযোগ আছে, যার মধ্যে ১৪০টি পাম্পে নতুন জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। আর মোবাইল জেনারেটর রয়েছে ৫২টি, যা দিয়ে জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পানি তোলা হয়। ৩০টি পাম্পে জেনারেটর স্থাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে পাম্পগুলোতে জেনারেটর ব্যবস্থা নেই সেখানে ডুয়েল বিদ্যুৎ লাইনের ব্যবস্থা রয়েছে। এক লাইনে বিদ্যুৎ চলে গেলেও অপর লাইনের বিদ্যুৎ দিয়ে পাম্প চালানো হয়। তবে দু’টি লাইনের কোনোটিতেই যখন বিদ্যুৎ না থাকে সে ক্ষেত্রে করার কিছু থাকে না।

বিশেষ প্রতিনিধি