বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি

শুভাশিস ব্যানার্জিঃ

কবিগুরু ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতই আলোকিত এক নাম। শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধারণ করে কুষ্টিয়া তথা দেশবাসী আজ গৌরবান্বিত। পদ্মার তীরবর্তী সবুজে ঘেরা শিলাইদহ গ্রামখানি কবির ভাল লাগত। তাঁর হৃদয়ে কাব্যভাবের স্পন্দন জাগাত। ‘গীতাঞ্জলী’র কাব্যরস যে তিনি শিলাইদহ থেকেই পেয়েছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে শিলাইদহ গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। এ গ্রামেই রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি, যা ছিল এককালের অত্যাচারী নীলকরদের নীলকুঠি। পরে তা কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের জমিদারের কুঠিবাড়ী (বাসস্থান) হিসেবে পরিচিত হয়। পদ্মার ঢেউ খেলানো প্রাচীরঘেরা ৩৩ বিঘা জমির ওপর তিনতলা এই কুঠিবাড়িটি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শিলাইদহের বুকে। তবে মূল বাড়িটি রয়েছে আড়াই বিঘার ওপর। চারদিকে আম বাগানের ছায়াঘেরা সি্নগ্ধ পরিবেশ। কাছেই পদ্মা। সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ। তবে সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা সেই শিলাইদহ এখন আর নেই। সবুজের সংকট পড়েছে বিখ্যাত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি চত্বরে। এখানকার বহু বছরের পুরনো গাছগুলো একে একে মরে যাচ্ছে। পানির অভাবে বাঁচানো যাচ্ছে না সৌন্দর্যময় বাগানের ফুলগাছও। আজ ২৫ বৈশাখ কবি গুরুর সার্ধশত জন্ম বার্ষিকী। প্রতি বছর এই দিনটি এলেই বদলে যায় কুঠিবাড়ির দৃশ্য। কুঠিবাড়িকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে উৎসব, বসে বিরাট গ্রামীণ মেলা। নামে মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে ওঠে স্থায়ীভাবে তৈরি দু’টি মঞ্চ। এসব আয়োজনকে ঘিরে পুরো কুঠিবাড়ী চত্বর হয়ে ওঠে আলোক ঝলমল। ফ্যাকাসে হয়ে পড়া দেয়ালে পড়ে চুনের আচড়। জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে তিনদিন ধরে চলে অনুষ্ঠানমালা। এরপর আবার বদলে যায় কুঠিবাড়ির চিত্র। ফিরে যায় সেই আগের অবস্থায়। খাঁ খাঁ করতে থাকে দুটি মঞ্চ। হয় না কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কমে যায় দর্শনার্থীর ভিড়। তবে তা শূন্য হয় না কোনদিনই। কবির যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকৃষ্ট সময়, তখনই তিনি বিচরণ করেছেন শিলাইদহে। কখনও একাকী, কখনও স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে এসেছেন শিলাইদহে, পেতেছেন ক্ষণিকের সংসার; ঘুরে বেড়িয়েছেন বোটে, পালকিতে। যে লেখার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব দরবারে পরিচিত হন; নোবেল পুরস্কার পান, সেই লেখার স্থান শিলাইদহ হওয়ায় কুষ্টিয়াবাসী তথা দেশবাসী আজ গর্বিত। শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ যেসব গান-কবিতা লিখেছেন, তার মধ্যে কুঠিবাড়ির পাশে বকুলতলার ঘাটে বসে লেখা “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে” গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর” “শিলাইদহে বসে লেখা “আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ”, “কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি” প্রভৃতি। কবিগুরু শিলাইদহে ছিলেন ১৯২২ সাল পর্যন্ত। এই সুদীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অবস্থানকালে তিনি সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
ঠাকুর বংশের মনোরম পল্লী শিলাইদহ ঃ
শিলাইদহ রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত একটি বর্ধিষ্ণু পল্লী। পদ্মা ,গড়াই, কালিগঙ্গা বিধৌত কুষ্টিয়া রবীন্দ্রনাথের সমগ্র কাব্য সাধনায় শিলাইদহের প্রভাব মৌল চেতনার মত সক্রিয় ছিল। শিলাইদহকে কেন্দ্র করেই তিনি গোটা বিশ্বকে দেখতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলতঃ শিলাইদহ এসে ছিলেন জমিদারী দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে। কিন্ত শিলাইদহে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের বাসনা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে পদ্মার প্রতি ছিলো কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের গভীর টান। শিলাইদহে ঠাকুর বংশের প্রায় সবাই এই মনোরম পল্লী ভবনে বাস করে পদ্মা, গড়াই বিধৌত পল্লীর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। শিলাইদহের মাটি, মানুষ এবং প্রকৃতিকে তিনি একান্ত ভাবে ভালবেসে ছিলেন। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের জন্ম নগরী কলকাতা এবং কর্মক্ষেত্র শান্তি নিকেতনের পরই তার সাহিত্য সাধন পীঠ হিসাবে শিলাইদহের স্থান। ১৮৩০ সালে দ্বারকানাথ ঠাকুর বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার পতিসর ও পাবনা জেলার শাহাজাদপুরের জমিদারী অংশের মালিক হন। এসব জমিদারী অঞ্চলের কেন্দ্র ছিলো কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার শিলাদহই , মূলতঃ জমিদারীর কাজ-কর্ম দেখাশোনার জন্যে দ্বিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথও রূপ বৈচিত্র্যের পটভূমিতে আসেন। ১৮৮৪ সালে দাদা শ্রী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাথে বহুবার রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকট সময়, তখন তিনি বিচরণ করেছেন শিলাইদহকে ঘিরে, জমিদারীর দায়িত্ব নিয়ে ১৮৯১ সালে শিলাইদহ আসেন।
রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িঃ
শিলাইদহ গ্রামের উত্তর প্রান্তে এক সবুজ শ্যামল পরিবেশে ৩৩ বিঘা জমির মধ্যে আড়াই বিঘা জমির উপর নয়ন জুড়ানো স্থাপত্য রীতিতে গড়া কবির তিনতলা বাড়ি। কার্ণিশে প্রাচীরের মতই পদ্মার ঢেউ খেলানো বাউন্ডারী প্রাচীর। কুঠি বাড়িতে রুম সংখ্যা আঠারো, দরজা সংখ্যা সতেরোটি, জানালার সংখ্যা ত্রিশটি। কুঠিবাড়ির তিন তলার কামরাটা ছিল কবি গুরুর লেখার ঘর। কবি এই ছাদের উপর বসে সুর্যোদয়, সূর্য্যাস্ত ও জ্যোৎস্না প্লাবিত প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হতেন। এই খানে বসে কবির দু’চক্ষুকে যে সমস্ত দৃশ্য তন্ময় হতো। তা তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছেন। এই ঘরের জানালা দিয়ে এখন শুধু পদ্মাকে দেখা যায়। আগে পদ্মা গড়াই দুটো নদীকে দেখা যেত। কবি রবীন্দ্রনাথ তখন ঘরে বসেই শুনতে পেতেন নদীর ডাক। নদী যেন কলকল ছলছল করে কবিকে ডাকতো। কবিও সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন পদ্মার বুকে, গড়াইয়ের বুকে। কখনো পদ্মার বুকে সাঁতরিয়ে তিনি আনন্দ উপভোগ করতেন।
কুঠি বাড়ির আশপাশে ঃ
শিলাইদহ কুঠি বাড়ির চারদিকে ঝাউ, শিশু ও শাল বীথিকায় ঘেরা। কবি গুরুর এই পল্লী ভবনের অপরূপ মনোরম শোভা বহুদূরের পথিক কেও আকর্ষণ করে। কুঠি বাড়ির চারিদিকে ঢেউ আকৃতির প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের পূর্ব দিকে আম কাঁঠাল লিচু নারকেল প্রভৃতি ফলবান বৃক্ষের বৃহৎ বাগান ও পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দীঘি। কুঠি বাড়ি ভবনের পশ্চিমে আর একটি বড় পুকুর। এই পুকুরটি শান বাঁধানো। ঘাটের প্রবেশ পথের দুধারে কবির স্বহস্তে দুটি বকুল বৃক্ষ রোপন করেন। ঐ গাছ দুটির মৃদমন্দ গন্ধ বিস্তারী নিবিড় ছায়ায় বসে কবি আপন মনে গান গাইতেন।
কত কিছু দিয়ে কুঠি বাড়ি তৈরিঃ
কুঠিবাড়ির ছাদ জাপান থেকে উন্নতমানের টালি এনে তৈরি করা হয়েছিল। তিনতলার সিঁড়িটি কাঠ দিয়ে গড়ানো। রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ জার্মানি থেকে মিস্ত্রি এনে এক বিশেষ কায়দায় সিঁড়িটি তৎকালীন সময়ে তৈরি করেন কিন্তু এ সিঁড়ির প্রতিরোধ মূলক কোন বীম নেই। তিন তলা কুঠি বাড়িতে উঠার জন্যে বাহির দিয়ে আরো একটি বিশেষ কায়দায় গোল করে প্যাঁচানো লোহার একটি সিড়ি রয়েছে।
কুঠি বাড়িতে সংরক্ষিত জিনিসঃ
কুঠিবাড়িতে কবির নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির ছবি রয়েছে। বাল্যকাল থেকে শুরু করে মৃত্যু শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত রয়েছে। আরো আছে মহাত্মাগান্ধী এন্ডুজ কবি ইয়েটসসহ বহু মূল্যবান ছবি। কবির নিজ হাতের লেখা কবিতা, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর প্রকাশিত কবির ছবি ও সনদপত্র। এমন কি কবি যেসব নাটকে অভিনয় করেছেন সেসব নাম ভূমিকার ছবি রক্ষিত। দ্বিতীয় তলাতে কবির শয়ন কক্ষে একটি পালং, ছোট একটা গোল টেবিল, কাঠের আলনা, আলমারী, কবির ব্যবহৃত চঞ্চল ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোর্ট। পল্টুন একটি, আট বিহারা ও ১৬ বিহারা পালকি। কাঠের চেয়ার একটি, আরাম চেয়ার একটি, হাত পালকি একটি, গদি চেয়ার দুটি, সোফাসেট দুটি, টেবিল দুটি, ঘাস কাটার মেশিন একটি, চীনা মাটির তৈরি একটি ওয়াটার ফিল্টার। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ও বিভিন্ন মনীষী গ্রুপ ছবি এবং রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে আঁকা বিভিন্ন ছবি ও কবিতা লেখা। এ সমস্ত জিনিসগুলো কুঠিবাড়ির একতলা থেকে দ্বিতীয় তলা ৯টি রুমে সংরক্ষিত আছে।
বকুলতলার ঘাটেঃ
কুঠি বাড়ির চারপাশ্র্বে রয়েছে ফুলের বাগান। উত্তর পাশ্র্বে প্রাচীন সব আমগাছ। কুঠি বাড়ির পশ্চিম পাশ্র্বে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বকুল তলার ঘাট। এ ঘাটেই তিনি গোসল করতেন। কবি রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে বসে যেসব গান কবিতা লিখেছেন, তাহলো বকুল তলার ঘাটে বসে। যেমন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। কয়াতে বসে কবির লেখা বিখ্যাত কবিতা হেমোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান, অপমান হতে হবে তাদের সবার সমান, গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর। শিলাদইদহে বসে লেখা আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, হে নিরূপমা, হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচেরে, নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাই আর নাহিরে, গায়ে আমার পুলক লাগে, তাই তোমার আনন্দ আমার পর ইত্যাদি।
শিলাইদহ শান্তি নিকেতনে বসেঃ
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ শান্তি নিকেতনে বসে অনেক কাব্য ও কাব্যাংশ রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সোনার তরী, চিত্রা, চির কুমার, সভা, গীতাঞ্জলি, চিত্রাঙ্গাদা, গল্প গুচ্ছ, কথা ও কাহিনীর গীতিমালা, কল্পনা, ক্ষণিকা, চৈতালী, ফুলনা, নৈবেদ্য খেয়া, পঞ্চভূতের ডায়রি, কাবুলিওয়ালা জীবন স্মৃতি, ক্ষধিত পাষাণ, শুভদৃষ্টি ইত্যাদি। কবির লেখা ছিন্নপত্র পড়ে সহজেই অনুমান করা যায় কবি পদ্মা গড়াই নদীকে কতো না ভালো বাসতেন। কত আপন জানতেন পদ্মাকে । আবার কবি যে পদ্মাকে এতো ভালবাসতেন সেই পদ্মাকে কবি রাক্ষসী বলতে দ্বিধা বোধ করেননি তিনি। শিলাইদহ ও পদ্মা নদী ছিল কবির সাহিত্য সৃষ্টির উৎস। রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশাতে ১৩৪৬ সালের ১লা চৈত্র শিলাইদহ পল্লী সাহিত্যে সম্মেলনের সম্পাদককে এক পত্রে লিখেছিলেন, আমার যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্য রস সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহ পল্লীতে।
শিলাইদহে বৈশাখী মেলাঃ
কবিগুরু রীবন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে প্রতি বছর ২৫, ২৬ ও ২৭ শে বৈশাখ তিনদিন ব্যাপী কবিতীর্থ শিলাইদহে ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এবং এখানে মেলা বসে। দেশ বিদেশ থেকে বহু লোকের সমাবেশ ঘটে। তিন দিনের অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকে আলোচনা, সেমিনার, কবিতা আবৃতি, নাটক নৃত্য, গীতিনাট্য এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান। ২৫ বৈশাখ ফিরে এলেই প্রতি বছর প্রকৃতির রুদ্রতার সাথে মানবজীবনের সহজাত নৈকট্য প্রাপ্তির সংগতি খুঁজতে গিয়ে একটি স্মরণীয় দিবস আমাদের মানস পটে ভেসে ওঠে তা হল রবীন্দ্রনাথের জন্ম বার্ষিকী।
রবিন্দ্রনাথের স্মৃতি ধন্য ঠাকুর লজ ঃ
কবির স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি সবার কাছে সু পরিচিত হলেও তার স্মৃতি মাখা ঠাকুর লজ এখনো অনেকের কাছেই অপরিচিত। কুষ্টিয়া শহরের মিল পাড়ায় কবি আজিজুর রহমান সড়কে অবস্থিত কবির পরিত্যক্ষ ঠাকুর লজ ভবন। এ ভবন এখন বেহাল অবস্থায় পরিণত। জানাযায়, জমিদারী দেখাশোনার জন্য কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় টেগোর এ্যান্ড কোম্পানি। ১৮৯৫ সালে টেগোর এ্যান্ড কোম্পানির অফিস হিসাবে ঠাকুর লজে তার ব্যবসায়িক কাজ শুরু করে। তখন এর সদর দফতর ছিলো কলকাতায়। কলকাতা থেকে শিলাইদহে আসার পথে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ এই টেগর লজ নামের ভবনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পরে তিনি পালকিতে চড়ে শিলাইদহে যেতেন।
কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্রনাথের ভগি্নর বিয়েঃ
কুষ্টিয়া শহেরর দক্ষিণ পশ্চিম দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোস্বামী দুর্গাপুর গ্রামের মুর্খাজি পরিবারের ডাক্তার সতীশ চন্দ্রের সাথে বিয়ে হয় রবীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠা ভগ্নী বর্ণ কুমারী দেবীর এবং পরে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার জয়রামপুর গ্রামের জনেকীনাথ ঘোষালের সাথে বিয়ে হয় রবীন্দ্রনাথের আরেক ভগ্নী স্বর্ণ কুমারী দেবীর।
লালন ফকিরের সাথে রবীন্দ্রনাথঃ
শিলাইদহের জমিদার হয়েও কবি এলাকার মাটি ও মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। কবি জমিদারী পরিচালনার পাশাপাশি অবসরে তিনি সাহিত্য চর্চা করার সুযোগ পেয়েছিলেন বেশি। তাই শিলাইদহ কে কেন্দ্র করেই তিনি গোটা বিশ্বকে দেখতে সক্ষম হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ আসার পর ভাব জগতের সম্রাট বাউল সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের সাথে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার আখড়া থেকে তার পরিচয় ঘটে। তারপর রবীন্দ্রনাথ লালন শাহ শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। লালন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশ্ব কবি হতে তিলে তিলে সাহায্য করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সাথে লালন ফকিরের গভীর সুসম্পর্ক থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে রবীন্দ্রনাথ আধ্যাত্মিক গুরু লালন সাঁইয়ের সম্বন্ধে তিনি কিছুই উল্লেখ বা তার জীবন বৃত্তান্তে লালন কি? লালন কোন জাতি ছিলেন কিছুই লিখে যাননি।

শুভাশিস ব্যানার্জিঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ২৪ ডট কম।

প্রধান সম্পাদক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।