রাজধানীসহ সারাদেশে নানা আয়োজনে ২০১৩ সালকে বরণ

রাজধানীসহ সারাদেশে নানা আয়োজনে ২০১৩ সালকে বরণ

কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ২০১৩ নতুন বছরে পদার্পণের সময় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ব্যাপক আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে পুরো পৃথিবী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সাড়ম্বরে ২০১৩ নববর্ষ বরণ উৎসব পালন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে দেশের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই আনন্দ-উল্লাসে মেতেছিল সারাদেশ। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে রাজধানীর পাঁচতারা হোটেলগুলোতে ছিল বিশেষ অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকার বিভিন্ন হোটেল রেস্তরায়ও আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ অনুষ্ঠানের। চলেছে গভীর রাত পর্যন্ত। এছাড়াও রাজধানীর গুলশান এক ও দুই নম্বর চত্তর, কাকলি এলাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলকাসহ বিভিন্ন রাস্তায় নানা আয়োজনে ও উৎসবের মধ্যদিয়ে বরণ করা হলে নতুন বছরকে। বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরো মহানগরী জুড়েই চলছে পটকা ফোটানো, হয় হল্লোড়, চিৎকার চেচামেচি ও উচ্চস্বরে গান বাজানোর ধূম। এদিকে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও পালন করা হয়েছে নানা উৎসব আর আনন্দ। আতশবাজি, আলোকসজ্জা, নাচ, গান, খাবারের উৎসবে মেতেছিল বিভিন্ন দেশের মানুষ। প্রতি বছরের মতো এবারও বাধভাঙ্গা আনন্দ উল্লাস আর উৎসবের মধ্যদিয়ে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। নতুন বছরে পদার্পণের জন্য রাত ১২টা ১ মিনিটের সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গেই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সম্মিলিত উল্লাস ধ্বনিতে ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) পরিণত হয় উৎসব বলয়ে। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী টিএসসি এসে জড়ো হয়। বাঁশি বাজিয়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে তারাও সারা বিশ্বের কোটি মানুষের সঙ্গে বরণ করে নেয় নতুন বছরের প্রথম প্রহরকে। বাধভাঙা উল্লাস আর আনন্দের মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি। আনন্দ উৎসবের অন্যতম কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে এ উৎসব। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চলে পিকনিক আর আতশবাজি ফুটানোর উৎসব। স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়। বড় বড় হোটেলগুলোতে ছিল জমকালো আয়োজন। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে এ সব স্থানে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষেরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল না করার নির্দেশনা থাকলে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রধান সব সড়কে তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। সন্ধ্যার পর থেকেই মালিবাগ-রামপুরা সড়কে গাড়ির বিশাল যানজট লাগে। এর কারণ হিসেবে ডিএমপির ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগ জানায়, সন্ধ্যা ৭টার পরে গাড়ি রাস্তায় নামাতে যে বিধি নিষেধ ছিল, তার জন্যই বিকেল থেকে রাস্তায় জট সৃষ্টি হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টা পর্যন্ত র‌্যাব ও পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা ছিল। অব্যাহত ছিল একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড রুখতে এবং অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা থাকায় রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে প্রথম জাঁকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালন করা হয়েছে ২০১৩ সালকে বরণ করে নেয়ার উৎসব। সিডনির বিখ্যাত আতশবাজি দেখতে শহরটির পোতাশ্রয় ঘিরে জড়ো হয়েছিল লাখো মানুষ। জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিশ্বের অন্যান্য শহরেরও। এছাড়া মস্কো, প্যারিস এবং লন্ডনে ছিল বর্ষবরণের নানা উৎসব। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকতে জড়ো হয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। এ সংখ্যা ২০ লাখের বেশি হবে বলেই ধারণা অয়োজকদের। আর প্রথাগতভাবে নতুন বছর শুরুর মুহূর্ত উদযাপন করতে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে কাউন্ট ডাউন ও আলোকসজ্জার আয়োজনতো ছিলই। পক্ষান্তরে ভারতে গণধর্ষণের শিকার তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশটিতে বিরাজ করে ভিন্ন চিত্র। ওই কারণে বর্ষবরণ উদযাপন উৎসব বাতিল করেছিল দেশটি। সোমবারও ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ হয়েছে। অপরদিকে প্রথমবারের মত বর্ষবরণের আয়োজন করে মিয়ানমার। এর আগে দেশটিতে সামরিক সরকারের আমলে জনগণ এক জায়গায় জমায়েত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। মিয়ানমারের নতুন আধা বেসামরিক সরকারের আমলে এ আনন্দোৎসবকে উদার পরিবেশের এক অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসাবেই দেখা হচ্ছে ।

নিজস্ব প্রতিনিধি