শিবিরের ঝটিকা হামলাঃ আক্রান্ত আইনমন্ত্রীর গাড়িবহর,পুলিশসহ বহু আহত ।। গ্রেফতার ১৬

শিবিরের ঝটিকা হামলাঃ আক্রান্ত আইনমন্ত্রীর গাড়িবহর,পুলিশসহ বহু আহত ।। গ্রেফতার ১৬

সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ  রাজধানীতে শিবিরকর্মীদের ঝটিকা হামলায় ১৩ নভেম্বর (মঙ্গলবার) আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহরও তাদের হামলার শিকার হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করেছে।
আহতদের মধ্যে মাথায় ইটের আঘাতপ্রাপ্ত নায়েক শহীদুল ইসলাম শহীদ (ব্যাচ নম্বর- ১৩৮৫৮) ও হাত-পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত কনস্টেবল মোহাম্মদ শাহীন রেজাকে (ব্যাচ নম্বর ২৪১৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর এক সার্জেন্টকে ভর্তি করা হয়েছে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আইনমন্ত্রীর প্রটোকলের এক সদস্য।
মঙ্গলবার বিকালে ফার্মগেটের কারওয়ানবাজার অভিমুখী রাস্তায় হঠাৎ করেই এ হামলা শুরু করে ছাত্রশিবির। পরে দ্রুত তা কারওয়ানবাজারে সার্ক ফোয়ারার মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহরও তাদের হামলার শিকার হয়। তবে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ এলে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করে। জামায়াতের নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বের হওয়া শিবিরের এক ঝটিকা মিছিল থেকে এ হামলা চালানো হয়। মাত্র ১৫ মিনিটে এ ঝটিকা হামলায় কয়েকশ শিবির কর্মী অংশ নেয়। এ সময় ১০-১২ জন পুলিশের একটি দল রাস্তার পাশে টায়ারের দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েও শিবিরকর্মীরা তাদের আক্রমণ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের তান্ডব দৃঢ়ভাবে মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। তাদের বিচার করা আমাদের দায়িত্ব। মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সব মানুষ উৎপাদনমুখী হোক জামায়াত-শিবির তা চায় না। তারা চায় ধর্মের নামে মানুষকে গোলাম বানিয়ে রাখতে। শহরের কিছু সুবিধাবাদী ছাড়া এই গোষ্ঠীর কোনো দাম নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করব না। তাদের বিচার চলছে। এ বছরের মধ্যে প্রথম সারির কয়েকজনের বিচার হবে। সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে আগামী বছর বা তার পরের বছর বাকিদের বিচার হবে। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব অধিকার নিশ্চিত করে সবাই সমান সুযোগের অধিকারী হোক জামায়াত-শিবির তা চায় না। দেশব্যাপী জামায়াত-শিবির এবং এদের দোসরদের নৈরাজ্য প্রতিহত করতে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে অভিযান চলছে তাতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কলাবাগান থানার ওসি এনামুল হক জানান, বিকাল পৌনে ৫টার দিকে জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল হঠাৎ করে কারওয়ানবাজার থেকে বের হয়ে সার্ক ফোয়ারার কাছে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা ওই সার্জেন্টের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে কারওয়ানবাজার মোড়ে অতিরিক্তি পুলিশ এলে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। ওসি আরো জানান, শিবিরকর্মীরা চোরাগোপ্তা মিছিল করে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় ঘটনাস্থলে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফার্মগেট থেকে কারওয়ানবাজার হয়ে সোনারগাঁও ক্রসিংয়ের দিকে আসছিল কয়েকশ শিবিরকর্মী। তাদের কিছুটা পেছনে ছিল ২৫-৩০ জন পুলিশ। শিবিরকর্মীরা একের পর এক গাড়ি ভাঙছে। আর নিষ্ক্রিয় পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ দূরত্বে দর্শকের ভূমিকায় ছিল। সোনারগাঁও মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ সার্জেন্টের মাথা ফাটিয়ে দেয় শিবিরকর্মীরা। জ্বালিয়ে দেয় তার মোটরসাইকেল। তবুও দর্শক পুলিশ। শিবিরকর্মীরা চলে যাওয়ার বিশ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। আহত সার্জেন্ট আজিজুল ইসলামকে নেয়া হয় হাসপাতালে। এ সময় ওই এলাকায় রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ফার্মগেট এলাকায় একটি মিছিল বের করে। সেখানে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কিছু কর্মী প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও শিবিরের হামলায় তারা চলে যায়। এরপর শিবিরকর্মীরা এগিয়ে যায় কারওয়ানবাজারের দিকে। এ সময় তিনটি মাইক্রোবাস তারা ভাঙচুর করে। এরপর কারওয়ানবাজার প্রজাপতি গুহার (আন্ডারপাস) মুখে গিয়ে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এরপর সোনারগাঁওয়ের মোড়ে থাকা এক পুলিশ সদস্যের মাথা ফাটিয়ে দেয় তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল হাদিস বলেন, শত শত শিবিরকর্মী ইট-পাটকেল নিয়ে এগিয়ে আসছিল। আমাদের স্যার আজিজুল ইসলাম সোনারগাঁও মোড়ের ট্রাফিক কার্যালয়ের সামনে ছিলেন। তিনি মিছিল থেকে মোটরসাইকেল সরানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শিবিরকর্মীরা তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এরপর তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা আইনমন্ত্রীর এপিএস আকসির এম চৌধুরীর মাইক্রোবাসটিও ভাঙচুর করা হয়। আকসির চৌধুরী বলেন, মন্ত্রী রূপসী বাংলা হোটেল থেকে একটি অনুষ্ঠান শেষ করে বাংলামোটর হয়ে ফিরছিলেন। সামনে পুলিশের গাড়ি, এরপর মন্ত্রীর গাড়ি। তারপর আমার গাড়ি ছিল। আমাদের গাড়িগুলো সার্ক ফোয়ারার মোড়ে এলে উল্টো দিক থেকে শিবিরকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। মন্ত্রীর গাড়িটি নিরাপদে গেলেও আমাদের গাড়িটির গ্লাস ভেঙে যায়।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, শিবিরকর্মীরা সব জায়গায় তান্ডব চালাচ্ছে। এখানেও তারা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গাড়িতে আগুন দিয়েছে। পুলিশের কি কোনো প্রস্তুতি ছিল না_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ছিল। এ কারণে আগে থেকেই এসব এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে মিছিলকারীরা পান্থপথের দিকে সটকে পড়ে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কারওয়ানবাজারে তেজগাঁও মহিলা কলেজের গলি থেকে শিবিরের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা গাড়ি চলাচলে বাধা দিলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। পুলিশের ধাওয়ার মুখে মিছিলকারীরা সার্ক ফোয়ারার সামনে এক সার্জেন্টের গাড়িতে আগুন এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ সদস্যদের ঘটনার পর তৎপর হতে দেখা গেছে। পান্থপথ সংলগ্ন বিভিন্ন গলিতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে সাতজনকে আটক করা হয়েছে। পরে আরো কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেক্য,যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত ৫ নভেম্বর মতিঝিলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত চলছে। গত সোমবার জয়পুরহাট শহরের অদূরে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা এক পুলিশ সদস্যের গায়ে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। অন্যদিকে জামায়াতের অভিযোগ, পুলিশ তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।

বিশেষ প্রতিনিধি